আনন্দ-বেদনায় বিদায় ২০২৪:স্বাগত ২০২৫

ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

‘এ আধার কখনো যাবে না মুছে/আমার পৃথিবী থেকে/আলোর পথে আর কেউ নেবে না/আমারে কখনো ডেকে’ নিলুফার ইয়াসমিনের এই গান বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা নতুন সূর্যের উদয় ঘটিয়েছে। কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, নিয়ন্ত্রিত ভোট, গুন-খুন-হত্যার রাজনীতি, নিষ্ঠুরতম মাফিয়া শাসনব্যবস্থার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ২০২৫ এ জনগণের ভোট দেয়ার নতুন প্রত্যাশায় শুরু হোক নতুন বছর। নতুন বছরে প্রতিবেশী ভারতের সব ষড়যন্ত্রের জাল চূর্ণ করে দেশের প্রতিটি প্রাণ নতুন সূর্যোদয়, নতুনভাবে প্রাণোচ্ছ্বল জীবনযাপন, নতুন প্রত্যয় নিয়ে নব আনন্দে জেগে উঠুক। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ঘড়ির কাটা ঘুরতে ঘুরতে শুরু হলো আরো একটি বছর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জ¦রা/অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’র মতোই। বিদায়ী বছরের সব কষ্ট-যন্ত্রণা-অনিশ্চয়তা-আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে ৫ আগস্টের প্রাপ্তিকে সঙ্গী করে নতুন বছরে সর্বোত্রই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক। বিদায় ২০২৪, স্বাগতম ২০২৫।

প্রকৃতির নিয়মে ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দকে বিদায় জানিয়ে আজ (পহেলা জানুয়ারি ২০২৫) কুয়াশার চাদর ভেদ করে প্রকৃতির নিয়মেই শীতের সকালে পূর্বাকাশে উঠেছে নতুন সূর্য। অতীতের হিংসা-বিদ্বেষ, অনিশ্চয়তা পেছনে ফেলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির সম্মিলনে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম দিন। স্বাগত ২০২৫। হ্যাপি নিউ ইয়ার (শুভ নববর্ষ)। প্রশ্ন হচ্ছে কেমন কাটলো বিদায়ী বছরটি? বিদায়ী বছরে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। এক কথায় আনন্দ-বেদনায় কেটেছে। বছরটি ছিল ভয়ঙ্কর, বিভীষিকাময়, অনিশ্চয়তা, সংকট এবং অস্থিরতায় কেটেছে বছরটি। জগজিৎ সিংয়ের ‘বেদনা মধুর হয়ে যায়/তুমি যদি দাও’ গানের মতোই। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন, শত শত মানুষ চোখ হারিয়েছেন, হাজারো মা-বাবা-ভাইবোন-স্বামী-স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে স্বজন হারিয়েছেন। ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ সালের পর ২০২৪ সালে নতুন ইতিহাস রচনা হয়েছে।

আনন্দ-বেদনার ২০২৪ সাল শুরু হয়েছিল ভোটের নামের প্রতারণার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিকে। ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালের গভীর রাতের নির্বাচনের মতোই ২০২৪ সালে হয়েছে ‘ডামি প্রার্থীর জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন’। ভারতের তত্ত্বাবধানে মাদার অফ মাফিয়া হাসিনা যখন দেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বি খলনায়িকা; তখন সরকারি চাকরিকে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন ২০২৪ সালের ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। প্রতিবাদে ৬ জুন বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন এবং ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় বেধে দেন। ১ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যা পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে চলছে গুলি। ঢাকার রাজপথে পড়তে থাকে ছাত্র-জনতার লাশ আর লাশ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিকে তাচ্ছিল্য করে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ১৫ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পরদিন দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৬ জুলাই থেকে পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। ওই দিন ঢাকার সায়েন্স ল্যাব ও নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। ওই দিন রংপুরে আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দাঁড়ান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অকুতোভয় আবু সাঈদ। একের পর এক গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এ ঘটনার ভিডিও গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। আন্দোলন দমাতে পুলিশের পাশাপাশি নামানো হয় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র দলীয় কর্মীদের। ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করে সরকার। ওই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, ‘শুট অ্যাট সাইট’ নির্দেশ দেয়া হয়। একপর্যায়ে সরকার কারফিউ জারি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ শহর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে বিপুল পরিমাণে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতের মতোই প্রতিটি রাতই ঢাকাবাসীর জন্য কালোরাত হয়ে আসে। আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস।

বিদায়ী বছর বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশ আরো একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে নির্বাচিত করে। এছাড়াও নারীদের সাফ ফুটবল কিংবা যুবদের এশিয়া কাপ বিজয় আনন্দে উদ্বেল করেছে বাংলাদেশের মানুষকে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে ডলার সংকট দূর করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা হলেও সাফল্য দেখায়।

বিদায়ী ২০২৪ সাল ছিল ঘটনায় ভরপুর। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পলায়ন থেকে শুরু করে মতিউরের ছাগলকা-, সাবেক আইজিপি বেনজিরসহ পুলিশ কর্তাদের দুর্নীতির খবর ছিলো ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। হাসিনা ভারতে পালানোর পর গোটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শূন্য হয়ে পড়ে। সাবেক এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম পর্যন্ত পালিয়ে যায়। এ সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপে আওয়ামী সমর্থকরা ফিরে আসার চেষ্টা করে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যরা বিদ্রোহ করে। চেষ্টা করে অরাজকতা সৃষ্টির। এরপর জুডিশিয়াল ক্যুর অপচেষ্টা। অতঃপর গার্মেন্টসে অস্থিরতা, পাহাড়ে অশান্তি, সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পকাহিনীর পর ইসকস ইস্যু অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের পুত্রের কোরবানির ঈদের সময় ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। এরপর সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, পুলিশ, আমলাদের বেশিরভাগই মহাদুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকা পাচার চিত্র ফাঁস হয়ে যায়। নাচের পুতুল হাসিনার পক্ষ নিয়ে ভারত ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর গ্রেফতারের পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হয়। বিদায়ী বছরের শেষ দিকে নির্বাচনের টাইমপ্রেম নিয়ে অস্থিরতা বিতর্ক থাকলেও প্রশাসনিক জুলুম-নির্যাতন, সহিংসতা, হামলা-মামলা গ্রেফতার, পাতানো বিচার প্রক্রিয়া কমে গেছে।
নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা থাকে নাগরিকের। বিগত বছরের ইতিহাস সৃষ্টির সাফল্যতা, প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ করে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের পরিক্রমা করতে হয়।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাসিনাকে নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন সোহেল তাজ
সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে ঝগড়া বন্ধ করুন: মজিবুর রহমান মঞ্জু
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে
পাঠ্যবইয়ে হান্নান-সেজানের সাহসিকতার গল্প
নড়াইলে নারী ইউপি মেম্বারকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যায় দুজন গ্রেফতার
আরও

আরও পড়ুন

নাঈমুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ১৬৩টি, জমা ৩৮৬ কোটি

নাঈমুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ১৬৩টি, জমা ৩৮৬ কোটি

সবার ঐক্যমতে দ্রুতই হবে ডাকসু নির্বাচন : ঢাবি ভিসি

সবার ঐক্যমতে দ্রুতই হবে ডাকসু নির্বাচন : ঢাবি ভিসি

ডলার বেচাকেনায় ব্যবধান ১ টাকার বেশি নয়

ডলার বেচাকেনায় ব্যবধান ১ টাকার বেশি নয়

আবুবকর সরকার সভাপতি তুহিন হোসেন সাধারণ সম্পাদক

আবুবকর সরকার সভাপতি তুহিন হোসেন সাধারণ সম্পাদক

পীর ইয়ামেনী মসজিদের ইমাম মাওলানা এমদাদুলের ইন্তেকাল

পীর ইয়ামেনী মসজিদের ইমাম মাওলানা এমদাদুলের ইন্তেকাল

খতমে নবুওয়ত না মানলে ঈমান থাকবে না

খতমে নবুওয়ত না মানলে ঈমান থাকবে না

সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে দ্রুত নির্বাচন দিন

সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে দ্রুত নির্বাচন দিন

পান্থকুঞ্জে গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

পান্থকুঞ্জে গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

রেলপথে দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি সতর্কতা

রেলপথে দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি সতর্কতা

ডায়াবেটিস রোগীদের নিরাপদে রোজা রাখার উপায় জানালো এসিইডিবি

ডায়াবেটিস রোগীদের নিরাপদে রোজা রাখার উপায় জানালো এসিইডিবি

রাজনীতিতে অশুভ বিভাজনের পদধ্বনির আভাস পাওয়া যাচ্ছে

রাজনীতিতে অশুভ বিভাজনের পদধ্বনির আভাস পাওয়া যাচ্ছে

২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নিলাম মঙ্গলবার

২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নিলাম মঙ্গলবার

ঢাবি আইবিএ’র বিবিএ প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

ঢাবি আইবিএ’র বিবিএ প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

দিন-দুপুরে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারে স্বর্ণের দোকানে চুরি

দিন-দুপুরে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারে স্বর্ণের দোকানে চুরি

হাসিনাকে নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন সোহেল তাজ

হাসিনাকে নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন সোহেল তাজ

সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে ঝগড়া বন্ধ করুন: মজিবুর রহমান মঞ্জু

সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে ঝগড়া বন্ধ করুন: মজিবুর রহমান মঞ্জু

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

পাঠ্যবইয়ে হান্নান-সেজানের সাহসিকতার গল্প

পাঠ্যবইয়ে হান্নান-সেজানের সাহসিকতার গল্প

সিলেট সীমান্তে ১ বছরে ৭ বাংলাদেশিকে হত্যা

সিলেট সীমান্তে ১ বছরে ৭ বাংলাদেশিকে হত্যা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হল হাফ ম্যারাথন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হল হাফ ম্যারাথন